ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৭ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুরে পান চাষে কৃষকের দিনবদল

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:৫৭, ৩০ নভেম্বর ২০২৩  

কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুরে পান চাষে কৃষকের দিনবদল

কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুরে পান চাষে কৃষকের দিনবদল

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলায় বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে আবাদি উঁচু জমিতে, বাড়ির পাশে, বিভিন্ন গাছে কিংবা বাড়ির উঠোনে পান চাষে চাষীদের আগ্রহ বাড়ছে। এতে একদিকে চাঙ্গা হচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতি, অন্যদিকে স্বাবলম্বী হচ্ছেন এলাকার অনেক দরিদ্র পরিবার। তবে বাজারে পানের দাম বেশি ও ব্যাপক চাহিদা থাকায় অন্যান্য ফসলের তুলনায় পান চাষের প্রতি ঝুঁকছে স্থানীয় কৃষকরা।একসময় ইউনিয়নজুড়ে দেখা যেত ধানখেত, এখন সেখানে চোখে পড়ে পানের বরজ। যাঁরা একসময় শ্রমিকের কাজ করতেন, তাঁরাও বাড়ির সামনে পরিত্যক্ত জায়গায় পানের চাষ করছেন। পান চাষ করে এলাকার অনেকেই ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন। পানের বরজে ঘেরা এই ইউনিয়নের নাম সিদলা ওআড়াইবাড়িয়া ইউনিয়নের কিছু এলাকা। এর অবস্থান কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর এলাকায়।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি বছর উপজেলায় ১২হেক্টর জমিতে পানের আবাদ হয়েছে। এর প্রতি একর জমিতে পানের উৎপাদন ব্যয় পাঁচ-ছয় লাখ টাকা, আর তা বিক্রি হয় ১০-১২ লাখ টাকায়।উপজেলায় সুরাটি,  হারেঞ্জা ও বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৫শ পান চাষি রয়েছে। উপজেলার সিদলা ইউনিয়নের পিতলগঞ্জ গ্রামের বিল্লাল হোসেন জানান, পান লাভজনক ফসল। উৎপাদন খরচের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ লাভ হওয়ায় বরজ পাল্টে দিয়েছে তার অভাবের সংসারের চিরচেনা স্মৃতি। পানের এই আয় থেকেই ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করানোর পাশাপাশি স্বাবলম্বী হচ্ছেন তারা। কিনেছেন ফসলি জমিও।

যাঁদের কৃষিজমি নেই, তাঁরাও বসতবাড়ির পাশে ও আঙিনায় পানের চাষ করছেন। সিদলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কাঞ্চন মিয়া বলেন, আট-নয় বছর ধরে এ ইউনিয়নের অনেক কৃষক ধানের আবাদ কমিয়ে দিয়ে পানের চাষ করছেন। এতে লাভ বেশি। ব্যবসায়ীরা গ্রামে ঘুরে কৃষকদের কাছ থেকে এসব পান কিনে বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করেন। কোটি টাকার বাণিজ্য হচ্ছে পান ঘিরে। দিন দিন বাড়ছে এলাকায় পানের চাষ।

বুধবার সিদলা ইউনিয়নের সুরাটি গিয়ে দেখা গেছে, মাঠের পর মাঠ পানের বরজ, কেউ খেত থেকে পান তুলছেন, কেউ করছেন খেতের পরিচর্যা। কথা হয় সুরাটি গ্রামের পানচাষি তমিজ মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘পান আমার কষ্ট দূর করছে। এখন গোয়ালে গরু আছে, ডুলিভরা ধান, আর খেতভরা পান আছে। সবমিলে মোর সুখের সংসার।’

হারেঞ্জা গ্রামে  সুরুজ মিয়ার বাড়ি। বাড়ির পাশে লাগানো পানখেত পরিচর্যায় ব্যস্ত তিনি। সুরুজ মিয়া বলেন, ‘এক বছর আগোত ২০ শতক জমিত ৫০ হাজার টাকা খরচ করি পানের গাছ লাগাইছি। চার মাস পর থাকি পান তুলি বেচ্ছি। পান বেচে প্রত্যেক বছরে খরচ বাদে ৮০ হাজার টাকা আয় করছি।

উপজেলার ৬ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় বিভিন্ন গ্রাম অঞ্চলে অসংখ্য পানের বরজ রয়েছে। এখানকার উৎপাদিত পান উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে সরবরাহ হচ্ছে পার্শ্ববর্তী পাকুন্দিয়া, নান্দাইল ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। এরই মধ্যে উপজেলা পানপল্লী খ্যাত সুরাটি,সিদলা, জাহাঙ্গীরপুর ,পিতলগঞ্জ, বরুয়া, হারেঞ্জাসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ পান চাষ করে বদলে দিয়েছে গোটা উপজেলার পরিবেশ। ওই উপজেলার পান চাষি তার শ্রম কাজে লাগিয়ে পান চাষ করে বদলে দিচ্ছে তাদের পরিবারের ভাগ্য।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এম সাহজাহান কবির জানান, পান লাভজনক হওয়ায় এ অঞ্চলে পান চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এবার উৎপাদিত পান থেকে প্রচুর আয় হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়াও পান চাষ করতে গিয়ে কৃষক কোন রকমের সমস্যার সম্মুখীন হলে খুব দ্রুত তাদের পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করে থাকেন বলেও জানান তিনি।

আরও পড়ুন
সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়