ঢাকা, রোববার   ১৯ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

চরে মিষ্টিকুমড়ার বাণিজ্যিক চাষ

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:১৩, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  

চরে মিষ্টিকুমড়ার বাণিজ্যিক চাষ

চরে মিষ্টিকুমড়ার বাণিজ্যিক চাষ

পলিবেষ্টিত বগুড়ার সারিয়াকান্দির যমুনাচরের পতিত জমিতে মিষ্টি কুমড়ার বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে চর এলাকার কৃষকের মুখে হাসি ফুটছে। বাজারে এ সবজির ভালো দাম থাকায় লাভবান হচ্ছেন তারা। পতিত জমিতে মিষ্টি কুমড়া আবাদ করে ভাগ্য বদলে যাচ্ছে কৃষকের। 

কৃষকরা বলছেন, ভালো মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর এর বাম্পার ফলন হয়েছে চর এলাকায়। বাণিজ্যিকভাবে চাষ হওয়া এসব হাইব্রিড জাতের মিষ্টি কুমড়া বগুড়ার চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। এতে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে গোটা দেশ। 

জানা যায়, বগুড়ার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার বেশিরভাগ এলাকা যমুনা নদীবিধৌত। উপজেলাগুলোর চরাঞ্চলে হাজার হাজার হেক্টর জমি প্রতি বছর পতিত হয়ে থাকে। কৃষকরা এখন জমি পতিত না রেখে হাইব্রিড জাতের মিষ্টি কুমড়া চাষ করে ব্যাপক লাভবান হচ্ছেন। ফলন ভালো হওয়ায় আশপাশের কৃষকরাও এ সবজি আবাদে ঝুঁকছেন। গত বছরের তুলনায় এ বছর মিষ্টি কুমড়া চাষ দ্বিগুণ হয়েছে। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশি মিষ্টি কুমড়ার চেয়ে হাইব্রিড জাতের মিষ্টি কুমড়া সংখ্যায় বেশি ধরে। এ জাতের কুমড়া প্রতিটি গাছে ২০ হতে ২৫টি করে ধরে। ওজন ৩ থেকে ৫ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। সাধারণত সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবর মাসে হাইব্রিড জাতের মিষ্টি কুমড়ার বীজ জমিতে বপন করা হয়। এর ৪০ থেকে ৫০ দিন পর গাছে ফুল আসে। আর কয়দিন পরই সেখানে ফল ধরে। যা কাঁচা অবস্থায় তরকারি হিসেবে খাওয়া যায় এবং বিক্রয়ও করা হয়। তবে পাকা কুমড়া সংগ্রহের উপযোগী হয় বপনের ৮০ থেকে ৮৫ দিন পরে। সাধারণত ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত পাকা কুমড়া সংগ্রহ করা যায়। 

সারিয়াকান্দি উপজেলার হাটশেরপুর এলাকার হাসান আলী জানান, দিঘাপাড়া চরের ১৮ বিঘা পতিত জমিতে হাইব্রিড জাতের মিষ্টি কুমড়ার চাষ করেছিলেন তিনি। ২ লাখ টাকা খরচ করে তিনি সাড়ে ১০ লাখ টাকার মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করেছেন। 

এ এলাকার আরেক কৃষক আবদুর রশিদ মণ্ডল জানান, চরাঞ্চলের এসব জমি আগে পতিত পড়ে থাকত। এখন সেসব জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষ করে আমরা ব্যাপক লাভবান হচ্ছি। তিনি এ বছর ৮ বিঘা জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষ করেছেন। এ পর্যন্ত তিনি ৫০ মণ বিক্রি করেছেন। এখনো তার জমিতে ৬০০ মণ মিষ্টি কুমড়া রয়েছে। 

পাইকারি ব্যবসায়ী আফজাল হোসেন জানান, যমুনার চর এলাকায় প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ বিঘা জমির মিষ্টি কুমড়া চুক্তিতে কিনে থাকেন তিনি। প্রতিবিঘা জমির মিষ্টি কুমড়া ৪০ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত ক্রয় করেন। এগুলো রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ বিভাগের বিভিন্ন বাজারে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। বর্তমানে তিনি ২৯ টাকা কেজি দরে এই সবজি বিক্রি করছেন। 

সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল হালিম জানান, গত বছর হাইব্রিড জাতের মিষ্টি কুমড়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১২০ হেক্টর। যা লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ১২৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছিল। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১৩০ হেক্টর। যা লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ১৪০ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছে। হেক্টরপ্রতি মিষ্টি কুমড়ার ফলন ২০ টন। ধানের চেয়ে মিষ্টি কুমড়া আবাদে বেশি লাভ হয়। 

তিনি আরও জানান, এক বিঘা জমির ধান থেকে কৃষকের যা আয় হয় মিষ্টি কুমড়া থেকে তার কয়েকগুণ বেশি আয় হয়। কৃষি অফিসের পরামর্শে কৃষকরা চরাঞ্চলের পতিত জমিতে হাইব্রিড জাতের মিষ্টি কুমড়া চাষ করে ব্যাপক লাভবান হচ্ছেন।

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়