ঢাকা, রোববার   ১৯ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

১৯৭১ সালের ৯ আগস্ট: চট্টগ্রাম বন্দরে ‘অপারেশন জ্যাকপট’

ফিচার ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৪:২১, ৯ আগস্ট ২০২১  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

১৯৭১ সালের ৯ আগস্ট দিনটি ছিল সোমবার। এদিন চীন-যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান অক্ষের বিরুদ্ধে কৌশলগত সুবিধা অর্জনের লক্ষ্যে ভারত সরকার সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে একটি মৈত্রীচুক্তি স্বাক্ষর করে। (এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে এক নতুন মাত্রা যোগ হয়)।

বাংলাদেশ সরকার এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে এই চুক্তির ফলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি সোভিয়েত মনোভাবে পরিবর্তন ঘটবে বলে আশা ব্যক্ত করে। পাকিস্তানী প্রচারমাধ্যম চুক্তিটিকে ‘পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতীয় আগ্রাসনের ছাড়পত্র’ হিসেবে বর্ণনা করে। পাকিস্তানী নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো চুক্তিটিকে চীন ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘আক্রমণাত্মক চুক্তি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

হরিনা ক্যাম্প থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে ‘অপারেশন জ্যাকপট’ পরিচালনার জন্য বাছাইকৃত ৬০ জন তরুণকে তিন ভাগে ভাগ করে ১ এবং ২ নম্বর গ্রুপকে স্থলপথে মিরসরাই এবং চট্টগ্রাম শহর হয়ে কর্ণফুলীর পূর্বপাড় চরলক্ষার সর্বশেষ ঘাঁটিতে এবং ৩ নম্বর গ্রুপকে নৌকাযোগে চরলক্ষায় পাঠানো হয়। তিনটি গ্রুপেরই সার্বিক কমান্ডের দায়িত্ব একজন কমান্ডারকে দেয়া হয়।

২ নম্বর সেক্টরের পানিয়ারূপে মুক্তিবাহিনী হানাদার সেনাদের অ্যামবুশ করে। এই অ্যামবুশে ১৪ জন পাকসেনা নিহত হয়। অ্যামবুশ শেষে মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপদে নিজ ঘাঁটিতে ফিরে আসে। ঝিকরগাছার পুলিয়ানি গ্রামে হানাদার সৈন্যরা লুটপাট করতে গেলে একজন মুক্তিযোদ্ধা একটি বাগান থেকে গ্রেনেড ছুঁড়ে একজন হানাদারকে হত্যা করে।

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের খবরে বলা হয়, সিলেটের লাতু অঞ্চলে মুক্তিবাহিনীর বীরযোদ্ধাদের সঙ্গে হানাদার পাকিস্তানী সৈন্যদের আট ঘন্টাব্যাপী প্রচন্ড সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষে মুক্তিযোদ্ধারা জীবনপণ করে হানাদার শত্রুদের ওপর প্রবল আক্রমণ চালায় এবং ৫৫ জন হানাদারকে খতম করে ও ৬৫ জনকে গুরুতর আহত করে। সংঘর্ষে ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন।

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের খবরে আরো বলা হয়, রংপুরের চিলমারি থানার ওপর অতর্কিতে আক্রমণ চালিয়ে গেরিলারা একজন অফিসারসহ ৫ জন পশ্চিম পাকিস্তানী পুলিশকে গুলি করে হত্যা করে।

সাপ্তাহিক জয়বাংলা পত্রিকার প্রতিবেদন, সিলেট জেলার উত্তরপূর্ব এলাকায় শাহবাজপুরে মুক্তিবাহিনীর সাফল্যজনক আক্রমণে ৫০ জন পাকসৈন্য খতম হয়েছে। গেরিলাযোদ্ধারা ৪ জন পাকিস্তানী সৈন্যকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে। যশোরের নাভারন এলাকায় গেরিলাযোদ্ধারা রাজাকারদের ওপর এক অতর্কিত হামলা চালায়। এতে ৯৩ জন শত্রু নিহত ও বহু আহত হয়। 

বগুড়া জেলার সাবগ্রামে গেরিলা বাহিনীর পেতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে পাকবাহিনীর ৫ জন সৈন্য নিহত ও ৬ জন আহত হয়। পাক হানাদার বাহিনী চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহকুমার শিবগঞ্জ থানায় মুক্তিবাহিনীর কালিবাড়ী অবস্থানের ওপর আক্রমণ চালায়। এই সংঘর্ষে মুক্তিবাহিনীকে প্রচুর ক্ষতি স্বীকার করে কালিবাড়ী অবস্থান ত্যাগ করতে হয়। পিরোজপুরে মুক্তিবাহিনী কাউখালি থানা আক্রমণ করে। এই অভিযানে মুক্তিযোদ্ধারা কাউখালি থানা ও প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র দখল করে। মুক্তিবাহিনী কুমিল্লা-চট্টগ্রাম সেক্টরের কোটেশ্বরে পাক অবস্থানের উপর মর্টার আক্রমণ করে এবং ৬ জনকে হত্যা করে। 

রাওয়ালপিন্ডিতে প্রদান সামরিক আইন প্রশাসকের সদর দফতর থেকে ঘোষণা করা হয়, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা ও অন্যান্য অভিযোগে বিশেষ সামরিক আদালতে বেআইনী ঘোষিত আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার করা হবে। আগামী ১১ আগস্ট বিচার শুরু হবে। বিচারের বিবরণ গোপন রাখা হবে। অভিযুক্তকে আত্মপক্ষ সমর্থন ও আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ দেয়া হবে। তবে আইনজীবীকে পাকিস্তানী নাগরিক হতে হবে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র জন কিং বলেন, কয়েক সপ্তাহ আগে শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার করা হবে বলে প্রথম যে খবর বের হয় সে সময় যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মতামত পাকিস্তান সরকারকে জানিয়ে দেয়া হয়। তিনি বলেন, মানবিক কারণে আমাদের উদ্বেগ পাকিস্তান সরকারের কাছে প্রকাশ করেছি। শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে এ মুহূর্তে ব্যবস্থা গ্রহণ পূর্ব পাকিস্তানে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমাধানের সম্ভাবনার ওপর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে বলে আমরা উল্লেখ করেছি।

টাঙ্গাইল জেলা শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান হাকিম হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি বিন্দুবাসিনী স্কুল মাঠে জমায়েত হয়। সভায় জেলা শান্তি কমিটির সেক্রেটারী আবদুল খালেক সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে শত্রুর মোকাবেলা করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, ভারতীয় ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়েই পাকিস্তানবিরোধী ধ্বনির উৎপত্তি হয়েছিলো। এই ধ্বনির মাধ্যমেই ভারত এদেশের সরলপ্রাণ জনসাধারণের মধ্যে বিদ্বেষের বীজ বপনের চেষ্টা করে। বর্তমানে তারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ঘৃণ্য প্রচারণায় মেতে উঠেছে।

কনভেনশন মুসলিম লীগ সেক্রেটারী জেনারেল মালিক মোহাম্মদ কাসেম তিন মুসলিম লীগকে একীভূত করার লক্ষ্যে আলোচনার জন্য ঢাকা আসেন।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়